পরিচিতি

বাংলা নাম :    মিষ্টি কুমড়া

ইংরেজী নামঃ   Sweed groud / Pumpkin

বৈজ্ঞানিক নামঃ Cucurbita maxima

পরিবারঃ         Cucurbitaceae

 

মিষ্টি কুমড়া একটি খরিফ মৌসুমের সবজি তবে রবি মৌসুমেও ব্যাপক ভাবে চাষ হয়ে থাকে।  কাঁচা বা পাকা কুমড়া এবং এদের কচি ডগা পাতা রান্না করে সবজি হিসাবে খাওয়া যায়। পাকা মিষ্টি কুমড়া ভিটামিন সমৃদ্ধ সবজী। কাচা মিষ্টি কুমড়ার ডগাতেও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন খনিজ পদার্থ রয়েছে  

জলবায়ু মাটি

wgwó Kzgov cÖavbZ MÖx®§ Kvjxb dmj, Z‡e kxZKv‡jI eûj cwigv‡Y Gi Pvl nq| mywb®‹vwkZ n‡j †h †Kvb ai‡bi gvwU‡Z Kzgovi Pvl Kiv hvq| Z‡e †`v-Auvk gvwU A_ev Gu‡Uj †`v-Auvk gvwU wgwó Kzgov Pv‡li Rb¨ Dc‡hvMx

জাত

বাংলাদেশে মিষ্টি কুমড়ার কোন অবমুক্তায়িত জাত নেই। স্থানীয় ভাবে আবাদ কৃত জাতের মধ্যে আকার, আকৃতি, বর্ণ মিষ্টতায় বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে উৎপাদনের সময় অনুসারে আমাদের দেশে আবাদকৃত কুমড়াকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা-বৈশাখী, শারদীয়া বা বর্ষাতি এবং মাঘী। এদের মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত শারদীয়া বা বর্ষাতি কুমড়া যা প্রধানত খরিপ মৌসুমে চাষ হয়। তাছাড়া বারমাসি জাতের কিছু মিষ্টি কুমড়া দেখা যায় যা বছরের সব মৌসুমেই ফল দিয়ে থাকে। তবে বাজারে আজকাল নিম্নলিখিত বেশ কয়েকটি হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার জাত পাওয়া যায়।

মিষ্টি কুমড়া- বিউটিঃ

ব্র্যাক সীড এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক বাজারজাতকৃত একটি হাইব্রিড জাত। গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, সতেজ-সবুজ, ফল গোলাকার চ্যাপ্টা। কাঁচা অবস্থায় ফলের ত্বকের রং কালচে, পরিপক্ক অবস্থায় বাদামি। ফলের শাঁস অদিক পুরু গাঢ় হলুদ, খেতে খুবই মিষ্টি। ফলের গড় ওজন .-. কেজি। চারা লাগানোর ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। উপযুক্ত উৎপাদন মৌসুম অক্টোবর-ফেব্রুয়ারী। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ৭০-৮৫ মেঃ টন

সুপ্রীম সীড কোম্পানীর হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া- থান্ডার বলঃ এজাতের কুমড়া সাধারণত ভাদ্র-অগ্রহায়ন এবং ফাল্গুন- জৈষ্ঠ্য মাসে বপন করা হয়। আকর্ষণীয় চ্যাপ্টা গোলাকার কুমড়া, জমিতে মাচায় উভয় প্রকারে চাষ করা যায়, ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিটি কুমড়ার গড় ওজন - . কেজি হয়

সুপ্রীমা এফ- (লালতীর সীড)-   চ্যাপ্টা, গোলাকার অগভীর দাঁড়া উঠানো ফল। মাংশল অংশ বেশ পুরু গাঢ় হলুদ, ওজন - কেজি। কাঁচা পাকা উভয় অবস্থায় ভক্ষণযোগ্য। এছাড়াও সুইটি এফ - নামে লালতীরের আরো একটি দিবস নিরপেক্ষ মিষ্টি কুমড়া' হাইব্রিড জাত রয়েছে।

ইস্পাহানি সীডস্ এর  মিষ্টি কুমড়া - বারোমাসি- দিবস নিরপেক্ষ উচ্চ ফলনশীল জাত। মাংশল অংশ বেশ পুরু এবং গাঢ় কমলা রং- এর। ওজন -   কেজী। সারা বছর চাষ করা যায়।  এছাড়াও হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া নামে এই কোম্পানীর আরো একটি জাত রয়েছে

মনিকা (মালিক সীড )- বীজ বপনের ৬৫ দিন পর থেকেই ফসল সংগ্রহ করা যায়। ওজন - . কেজী 

জমি তৈরি

পানি নিকাশের ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর মাটিতে ফসল ভালো হয়। মিষ্টি কুমড়ার জন্য ভালোভাবে /৪টি চাষ মই দিয়ে জমি তৈরি করা হয়

বীজ বপনের সময়

বৈশাখী কুমড়ার বীজ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারীতে, শারদীয়া বা বর্ষাতি কুমড়ার বীজ এপ্রিল-মে মাসে এবং মাঘী কুমড়ার বীজ জুলাই-আগস্টে বোনা হয়

বীজ হার

হেক্টর প্রতি প্রায় কেজি বীজের প্রয়োজন হয়

বপন পদ্ধতি

জমি তৈরি করার পর রবি মৌসুমে .৩০ মিটার এবং খরিফ মৌসুমে .৮০ মিার চওড়া করে বেড তৈরী করতে হবে। বেডের দুপাশ দিয়ে ২০ সেমি গভীর ৩০ সেমি চওড়া নালা রাখতে হবে। রবি মৌসুমে রোপন দুরত্ব হবে .৫০ x .৫০ মিটার, খরিপ মৌসুমে রোপন দুরত্ব হবে 3x মিটার। প্রতি মাদার আকার হবে ৪৫ x ৪৫ x ৪৫ ঘন সেমি। চারা বের হবার পর প্রতি মাদায় / টি পুষ্ট চারা রেখে বাকীগুলো তুলে ফেলা উচিত। বসত বাড়ীতে অল্প পরিমাণে কুমড়ার চাষ করতে হলে ছায়াহীন স্থানে দুএকটি মাদায় বীজ বুনে গাছ মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোন বৃক্ষের উপর তুলে দেয়া যেতে পারে। বৈশাখী কুমড়া ভূমিতে হতে পারে। অন্যান্য কুমড়ার জন্য মাচার দরকার হয়

সার প্রয়োগ

মিষ্টিকুমড়ার জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে-

সার

 মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি)

বীজ বোনার ১০ দিন আগে মাদায় দেয়

পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়

প্রথম কিস্তি

দ্বিতীয় কিস্তি

 বীজ বপনের ২০ দিন পর মাদার পাশে দেয়

 বীজ বপনের ৩৫ দিন পর মাদার পাশে দেয়

গোবর

টন

সব

-

-

ইউরিয়া

১১০ কেজি

-

৫৫ কেজি

৫৫ কেজি

টি এস পি

১৭৫ কেজি

সব

-

-

এম পি

১৩০ কেজি

সব

-

-

জিপসাম

৮০ কেজি

সব

-

-

জিংক অক্সাইড

কেজি

সব

-

-

খৈল

৪০০ কেজি

সব

-

-

 

সূত্রঃ বসত-বাড়ীতে সবজী উৎপাদন , সরেজমিন গবেষনা বিভাগ , বি আর আই, গাজীপুর

অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

সেচ

শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টিকুমড়ার ক্ষেতে সেচের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ফুল ফোটা এবং ফলের বৃদ্ধি কালে সেচ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। জমিতে রস না থাকলে প্রতি সপ্তাহে একবার সেচ দেয়া উচিত

 

বাউনী দেয়া বা মাটিতে খড় বিছানো :

কুমড়া চাষে সাধারণত বাউনী ব্যবহার করতে হয়। বাউনীর উপর কান্ড তুলে দিলে ফলন বেশি হয় ফলের গুণাগুণ ভালো হয়। গাছ যখন ১৫-২৫ সেমি j¤^v হয় তখনই মাচার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক স্থানেই মাঠে মাচা ছাড়াই কুমড়ার চাষ করা হয়। মাঠে চাষের বেলায় লতা দ্বারা জমি আবৃত না হওয়া পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখা দরকার। খড় গাছের গোড়া হতে ছের শাখা প্রশাখব্বাড়ার সংগে সংগে দিতে হবে। মাচা বিহীন চাষে ফলন একটু কম হলেও উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়।

  

                        ভুঁই মিষ্টি কুমড়া                                 

কৃত্রিম পরাগায়ন :

কৃত্রিম পরাগায়ন মিষ্টি কুমড়ার অধিক ফল ধারণে খুবই সহায়ক। কৃত্রিম পরাগায়নের জন্য ভোর বেলা একটি সদ্য ফোটা পুরুষ ফুলের পরাগধানী স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে আলতো ভাবে - বার ঘষে দিতে হবে। কাজটি করার আগে পুরুষ ফুলের পপিড়ি গুলো সব অপসারণ কেও নিতে হবে। একটি  পুরুষ ফুল দিয়ে সাধারণত ১০টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন সম্ভব। পরাগায়ন অবশ্যই সকাল ১০ টার মধ্যে শেষ করতে হবে

 

পুরুষ ফুল                                       স্ত্রী ফুল

পোকামাকড় রোগ বালাই

ফলের মাছি পোকা: কচি ফলের উপরের খোসায় পোকা ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল খেয়ে নষ্ট করে এবং অনেক সময় আক্রান্ত  ফল পঁচে যায়। পোকার আক্রমণ হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা রগর ৪০ ইসি ২মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করতে হবে। ছাড়া জমিতে ডিপ্টারেক্স বিষটোপ ব্যবহার করেও পোকার  আক্রমণ রোধ করা যায়

 

মাছি পোকা

জাব পোকা : গাছের পাতার সবুজ অংশ এবং কচি কান্ডের রস চুষে খেয়ে  গাছকে দূর্বল করে, ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পোকার  আক্রমণ  হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা রিপকর্ড মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করতে হবে

 লাল কুমড়া বিটল: পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাতা ফল খেয়ে ফেলে। পোকাগুলো কান্ড বা পাতার নিচে থাকে। পোকা

দমনের জন্য জমি সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন রাখতে হবে, যান্ত্রিক  উপায়ে বা হাত দিয়ে পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। ছাড়া  পারফেকথিয়ন বা সুমিথিয়ন মিলি/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে   সেপ্র করেও এই পোকা  দমন করা সম্ভব

লাল কুমড়া বিটল পোকা

 

 

এপিলাকনা বিটল: পূর্ণ বয়স্ক পোকা কীড়া পাতার সবুজ অংশ খেয়ে শুধু পাতার শিরা বাদ রেখে দেয়। আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে মরে যায়। আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় হাত দিয়ে কীড়া ডিম সমেত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা যেতে পারে। আক্রমণ অধিক হলে ম্যালাথিয়ন মিলি/লি মাত্রায় সেপ্র করে পোকা  দমন করা যায়

 

পাতায় এপিলাকনা বিটলের কীড়া

রেড স্পাইডার মটি:

এক ধরনের কুব ছোট মাইট পাতার নীচে থাকে এবং পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে যার ফলে পাতা কোকড়িয়ে যায়। পেও পাতাটি হলুদ হয়ে মারা যায়। রোগ প্রতিকারে নিউরন ৫০ইসি বা ওমাইট ৫৭ ইসি মাইটি সাইডের যে কোন একটি প্রতি লিটার পানিতে মিলি হিসেবে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে

কুমড়ার পাউডারী মিলডিউ রোগ:

পাউডারী মিলডিউ রোগে পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায় যা পাতা নষ্ট করে দেয়। রোগের প্রতিকারে গ্রাম থিওভিট ৮০ ডব্লিউপি অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি . মিলি/ লি পানিতে মিশিয়ে দিন অন্তর প্রয়োগ করতে হবে

 

পাতায় পাউডারী মিলডিউ

কুমড়ার ডাউনী মিলডিউ রোগ:

ডাউনি মিলডিউ রোগ হলে গাছের পাতা ধূসর রং ধারণ করে, পাতায় সাদা

সাদা পাউডার দেখা যায়। রোগ দমনে গ্রাম রিডোমিল এম জেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সেপ্র করা যেতে পারে

 

কুমড়ার মোজাইক রোগ :

মোজাইক ভাইরাস রোগে পাতা গুলোতে হলুদ সবুজ রংয়ের মোজাইক দেখা যায়। পাতা কুঁকড়িয়ে যেতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি ফলন খুব কমে যায়। রোগের কোন প্রতিকার নেই। আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করে দিতে হবে। জমিতে পানি নিষ্কাশন করতে হবে রোগ সাধারণত বাহক মাছি দ্বারা বিস্তার লাভ করে। বাহক মাছি দমনের জন্য রগর ৪০ ইসি (.৫মিলি/ লিটার পানিতে মিশিয়ে) প্রয়োগ করে রোগের বিস্তার রোধ করা যায়

 

কুমড়া পাতায় ধূসর দাগ :

পাতায় ছোট ছোট পানি ভেজা দাগ পড়ে। দাগ গুলো তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায় এবং কালচে বাদামি থেকে ধূসর, ত্রিকোণাকার দাগ পড়ে।  আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে মরে যেতে পারে। আক্রান্ত গাছ নষ্ট করে ফেলতে হবে। বেভিস্টিন গ্রাম/লি ১০ দিন পর পর ব্যবহার করে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়

 

এনথ্রাকনোজ :

আক্রান্ত গাছের পাতাতে কালচে লাল দাগ হয়। দাগগুলো প্রথমে ছোট ছোট থাকলেও প্রায়ই জুড়ে গিয়ে বড় হয়। পাতা কুঁচকে ঝলসে যায়। পরে বোঁটা ডাটায় আক্রমণ হলে প্রথমে পানি ভেজা-হলদেটে দাগ হয়। পরে ভেজা ভেজা কালচে হয়ে যায়। রোগটির প্রতিকারের জন্য ডাইথেন এম-৪৫ গ্রাম/লি মাত্রায় সেপ্র করা যেতে পারে

ফসল সংগ্রহ

সবজি হিসোবে ব্যবহার করতে হলে কুমড়ার ওজন আধা কেজি হলেই  সংগ্রহ করা উচিত। মিষ্টি কুমড়া বেশী পাকিয়ে সংগ্রহ করলে বহুদিন ঘরে  রেখে অসময়ে সবজি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। মিষ্টি কুমড়া কিছুটা বোঁটা রেখে তুললে পঁচার সম্ভাবনা কম থাকে এবং ধরতেও সুবিধা হয়

ফলন

হেক্টর প্রতি ফলন সচরাচর ২০-৪০ টন তবে কচি ফল সংগ্রহ করলে হেক্টর প্রতি ১৫ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে